এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কাজ করেন শ্রমিকরা, টাকা যায় চেয়ারম্যানের পকেটে! ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন হয়ে গেছে, এমন ম্যাসেজ শ্রমিকের মোবাইলে আসার পর টাকা চাইতে গিয়ে হন দুর্ব্যবহারের শিকার! আবার শ্রমিকের তালিকায় নাম আছে প্রবাসে অবস্থানকারী চেয়ারম্যানের স্বজনের! এহেন অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে। এতেই শেষ নয়, এবার অভিযোগের তদন্ত নিয়েও তালবাহানার অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে। নানা অজুহাতে তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছেনা কমিটি। এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের কথাও সচেতন মহলে চাউর হচ্ছে।
নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে গত ২ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্যে সরকারের গৃহিত ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকা আত্বসাতের লিখিত অভিযোগ হয়। কর্মসূচিভূক্ত পাঁচ শ্রমিক জাফরপুর গ্রামের আলাউদ্দিন, আক্তার, রেজাউল করিম, আবুল হোসেন এবং এরশাদ এই অভিযোগটি দাখিল করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগের তদন্ত করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৯ জুন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। এরপর পেড়িয়েছে প্রায় এক মাস। জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির অন্য দু’সদস্য হচ্ছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বক্কর।
অভিযোগ মিলেছে, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ২১ জুন অভিযোগকারীদের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে তদন্ত করতে যান ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে গিয়ে অভিযোগকারীদের ডেকে পাঠান। কিন্তু চেয়ারম্যান তার সন্ত্রাসী দলবলসহ কয়েক’শ লোক নিয়ে তদন্তস্থলে অবস্থান নেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় তদন্ত কমিটির সামনে আসতে পারেননি অভিযোগকারীরা। পরে ২৩ জুন গ্রামের সুফিয়াবাদ শাহ সুফি সাইয়্যেদ আজমত উল্লাহ (রহ.) সিনিয়র মাদরাসায় তদন্তের স্থান নির্ধারণ করে তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গত দুই সপ্তাহেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি।
চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে বলা হয় হতদরিদ্রদের সহায়তায় সরকার টাকা দেবে বলে অভিযোগকারী পাঁচজনসহ ৯৪ জনের নামে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খোলা হয়। গত ৬ এপ্রিল তাদের প্রত্যেকের হিসাবে আট হাজার টাকা করে জমা হয়। যার ম্যাসেজ আসে তাদের মোবাইলে। পরদিন সকালে চেয়ারম্যানে ব্যাংক কর্মচারীসহ তাদের বাড়িতে এসে মেশিনে তাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যান এবং কয়েকদিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার আশ্বাস দেন। আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর ওইদিনই টাকা উত্তোলন হয়েছে বলে তাদের মোবাইলে পুনরায় ম্যাসেজ আসে। কিন্তু তারা টাকা পাননি। টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারের শিকার হন। এভাবে গত চার বছর ধরে চেয়ারম্যান হতদরিদ্রদের টাকা আত্মসাত করে চলেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। কর্মসূচির তালিকায় চেয়ারম্যান তার কতেক স্বজনের নাম দিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এই স্বজনরা হচ্ছেন চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো ভাই দুবাই প্রবাসী হাবিবুর রহমান লিটনের স্ত্রী বিউটি আক্তার, ইরাকে কর্মরত মো. দেলোয়ার হোসেন, ওমানে কর্মরত মো. আল-আমীন। কর্মসূচিভূক্ত একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পান। এ হিসেবে ৪০ দিনে একজনের মোট পাওনা হয় আট হাজার টাকা। নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং এপ্রিল ও মে মাসে এই কর্মসূচি হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ জানান, ‘সম্ভবত ১৬ জুন তাদের তদন্ত কমিটি করা হয়। তিন কার্য দিবসের মধ্যে আমাদেরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিলো। জুন ক্লোজিং এবং অফিসে কর্মচারীরা না থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারিনি