এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অর্ধশতাধিক স্পটে মাদক কেনা-বেচা, আশঙ্কাজনক হারে জুয়ার আসর বৃদ্ধি, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বৃদ্ধিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘটছে অবনতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এসবই হচ্ছে থানার ওসির ‘দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন’ নীতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করায়। ওসি জাবেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ দিলেন আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
৯ জুলাই আলাদাভাবে তাদের কাছে অভিযোগ দেয়ার আগে উপজেলার সাত ইউপি চেয়ারম্যান ওসি’র অপসারণ চেয়ে করেন সংবাদ সম্মেলন। বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং অপরাধ জগতের লোকজন ওসি জাবেদ মাহমুদের সাথী। বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তারে ওসির কোনোরকম আগ্রহ নাই বলে রয়েছে অভিযোগ।
অভিযোগে বলা হয়, জাবেদ মাহমুদ কয়েক মাস আগে আশুগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকে এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওসি ‘দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের লালন’র পরিবর্তে ‘দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন’ নীতিতে তার কার্য্ক্রম পরিচালনা করছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও অপরাধ জগতের লোকজন তার সাথী। বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তারে কোন আগ্রহ নেই ওসির। আশুগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জুয়া খেলা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজারের পোড়াগুদাম এলাকায় জুয়ার আসরে মারামারিতে খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
তার যোগদানের পর আশুগঞ্জ মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়। থানার তিনশ’ গজ দূরত্বের মধ্যে রেলগেইট, এলএসডি গোডাউনসহ বিওসি ঘাট, হাসপাতাল সড়কের পেছনে, পোড়াগুদাম, বাশঁগলি, ফেরিঘাট, উপজেলার খড়িয়ালা, আড়াইসিধা, লালপুর বাজারের অর্ধশতাধিক স্পটে মাদক বেচা-বিক্রি চলছে। একারণে উপজেলায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনশৃঙ্খখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মাসোহারা নিয়ে চলতে দেয়া হচ্ছে মাদক ব্যবসা। এছাড়া সারা দেশে মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবেও ব্যবহ্নত হচ্ছে আশুগঞ্জ। জনপ্রতিনিধিসহ সবার সঙ্গে ওসি দুর্ব্যবহার করেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
ওসির বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে স্বাক্ষর করেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ফিরোজ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু নাছের আহমেদ,যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, উপজেলা মহিলা লীগ সভাপতি রেহেনা মকবুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসবকলীগ সভাপতি মো. শাহিন সিকদার, সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, কৃষকলীগ সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বকুল, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মোছা, ছাত্রলীগের আহবায়ক রিফাত সিকদার, যুগ্ম আহবায়ক মো. সিরাজুস সালেকিন মিম, রফিকুল ইসলাম ও হান্নান সিকদার, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে জেলা পরিষদ সদস্য মোছাম্মৎ স্বপ্না বেগম, চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খন্দকার, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু, তালশহর ইউপি চেয়ারম্যান আবু শ্যামা, আড়াইসিধা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া, তারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস হাসান, শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমির হোসেন।
এর আগে গত ৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে ওসি’র অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আশুগঞ্জ উপজেলার সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। গত শনিবার আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ওসি’র বিরুদ্ধে আরেকটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন। ফেসবুকে মানহানিকর লেখালেখি এবং সরাসরি তাকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ করলেও এসব বিষয়ে ওসি জাবেদ মাহমুদ কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন