এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ভারতের পণ্যই যাবে ভারতে। এজন্য ব্যবহৃত হবে বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কপথ। সেই লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত হয় চুক্তি। ওই চুক্তি অনুযায়ী ট্রানজিটের প্রথম চালান বন্দর-সড়কপথ পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছালেও কেবল মূখ্যমন্ত্রীর জন্য হচ্ছে বিলম্বিত। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) আখাউড়া ও আগরতলা স্থলবন্দরের শূণ্যরেখায় ত্রিপুরার রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব উপস্থিত থেকে চালান গ্রহণ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
পরীক্ষামূলক প্রথম চালান হিসেবে ৫৩.২৫ মেট্রিকটন রড এবং ৪৯.৮৩ মেট্রিকটন ডাল বুধবার (২২ জুলাই)আখাউড়া স্থলবন্দরে আসে। কেবল ‘আনুষ্ঠানিকতার’ জন্যই মালামাল নেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে আখাউড়া ও আগরতলা স্থলবন্দরের শূণ্যরেখায় ত্রিপুরার রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিটের প্রথম চালান গ্রহণ করবেন।বাংলাদেশের ‘ম্যাংগু লাইন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ডার্সেল লজিস্টিক লিমিটেডের পাঠানো পণ্যগুলো ‘আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামীয় কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যাণ্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যাণ্ডএফ) এজেন্ট পরিবহন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যাণ্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভম্যান্ট অব গুডস্ টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তির আওতায় এবং ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে সাক্ষরিত স্ট্যাণ্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ভারত নিজ দেশে পণ্য পরিবহনের অধিকার লাভ করে। পরীক্ষামূলক প্রথম চালান হিসেবে ৫৩.২৫ মেট্রিকটন রড এবং ৪৯.৮৩ মেট্রিকটন ডাল নিয়ে কোলকাতার নদীবন্দর থেকে গত ১৪ জুলাই ‘সেজুতি’ নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম নদীবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে মঙ্গলবার জাহাজটি চট্টগ্রাম নদীবন্দরে নোঙর করে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে কে.জে. শিপিং জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজ করে।পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নদীবন্দর থেকে বুধবার ভোররাতে রড ও ডালবোঝাই চারটি ট্রেইলর আখাউড়া স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ট্রেইলরগুলো বুধবার বিকেলে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছায়।
এদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের পরীক্ষামূলক এই ট্রানজিট চালানের জন্য ফি নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি প্রতি চালান ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি মেট্রিকটন ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ১০০ টাকা, অ্যাসকর্ট চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ৫০ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ১০০ টাকা, কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি প্রতি কন্টেইনার ২৫৪ টাকা। এছাড়া ইলেকট্রিক লক অ্যাণ্ড সিল ফি হিসেবে বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ দিতে হবে।
ভারতীয় পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বুধবার পণ্যগুলো আগরতলায় পাঠানোর জন্য আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া ছিলো। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশন ও কাস্টমস্ কর্তপক্ষ আমাদেরকে জানিয়েছে আজকে পণ্য গ্রহণ করা হবে না। বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে। এই আনুষ্ঠানিকতায় ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। মূলত এজন্যই এক দিন বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য পাঠানোর কাজ।’
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াক বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন। পণ্য পরিবহনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে মাশুল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেই মাশুল আদায়ের বিষয়গুলো সম্পাদিত হবে।