পদ্মা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলো চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার। স্কুলটি চরের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত ছিল। একইসঙ্গে স্কুল এলাকার লক্ষ্মীরচরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
সাইট সিলেকশনে অনিয়মের কারণেই বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা জলে গেলো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া বছরের পর বছর নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনও ভাঙনের প্রধানতম কারণ হিসেবে দায়ি করেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ওই স্থানে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করাটাই ঠিক হয়নি।
গত কয়েক দিনের ভাঙনে ভবন এলাকার চারপাশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভবনটি পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার বলেন, ‘ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় নামে ওই ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যালয়।
২০০০ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়টি ১০ বার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়। গত রবিবার থেকে ভবনটি নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার তলিয়ে যায়। এতে ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া হুমকির মধ্যে পড়েছে। তাই আমাদের দাবি, এখানে একটি ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হোক।’
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা ভাঙনের শিকার হই। এবার পদ্মার ভাঙনে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ বাড়ি ঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর বেশ কিছু বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, গত বছর জানুয়ারিতে সাইট সিলেকশনের সময় মেঘনা নদী প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে ছিল। এটি চরাঞ্চল। যখন ভাঙা ধরে তখন মাইলের পর মাইল ভেঙে যায়। এছাড়া মেঘনার ভাঙন তো আছে।
সাইক্লোন শেল্টারের ঠিকাদার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য পারভেজ গাজী রনি বলেন, ‘এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউনিয়নবাসীর কথা চিন্তা করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার করে দিয়েছেন। এই ভবনটির সাইট সিলেকশনের সময় নদী এখান থেকে বহু দূরে ছিল। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে ভবনটি নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি।’
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা জানান, স্থায়ী কোনও বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া কোনও কিছুই রক্ষা করা সম্ভব নয়। ভবন কিংবা এলাকা ভাঙন রোধে বাধ নির্মাণের বিকল্প নাই।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ‘রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটি চারপাশে পদ্মা-মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। বর্তমানে পদ্মা-মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ও প্রচণ্ড স্রোতে ভবনটি তলিয়ে গেছে। এই ভবনটি নির্মাণের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কিনা তা আমি জানি না। তাছাড়া এই স্থানে এই স্থাপনা নির্মাণ করাটাই ঠিক হয়নি।’