কসবায় চার জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহয়াতার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। ওই উপহার হিসেবে আড়াই হাজার টাকা প্রাপ্তির তালিকা দেয়া নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা করেছেন সীমাহীন নয়-ছয়। উপহার তালিকায় সত্যিকারের সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করতে নিজের স্বজনদের নামের পাশে চেয়ারম্যানের নিজস্ব ফোন নম্বরও করে দিয়েছেন সংযুক্ত। উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে দাখিল হয়েছে লিখিত অভিযোগ।

কসবা উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধির ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গত ২১ জুন কসবা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবু জাহের, ২২ জুন কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানিক মিয়া, ২৩ জুন উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খান এবং ২৪ জুন উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভুইয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

কসবা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবু জাহেরের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে ১১টি নাম দিয়ে এদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এদের মাঝে একাধিক বিত্তশালী ব্যক্তি রয়েছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়। এদিকে আত্মীয়করণ, বিত্তশালী, নিজের অনুসারী, পৌর এলাকার বাসিন্দা, ভুল তথ্য দিয়ে নাম অন্তর্ভূক্তকরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয় ৩৪ জনের নামের তালিকা।

উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৩৩ জনের নাম তালিকাবদ্ধ করার অভিযোগ আনা হয়। তিনি তালিকায় স্বজনের নামের পাশে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, বিত্তশালীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ওই চেয়ারম্যানের তালিকায় মুসলেম খানের ছেলে শাহাদাৎ খানের নাম থাকলেও মোবাইল নম্বর দেয়া আছে ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর।

সবচে’ বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আল-মামুন ভুইয়ার বিরুদ্ধে। তিনি সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ১২০ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। তন্মধ্যে রয়েছে সৌদিআরব প্রবাসী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিত্তশালীদের নাম।

কসবা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবু জাহের বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনের নাম থাকলে কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করবো। মূলত মেয়রের পক্ষীয় কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠায় সেগুলোকে ঢাকতেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।’
কসবার পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মানিক মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার যেসব আত্মীয় স্বজনের কথা বলা হচ্ছে তারা নেহায়েতই গরিব মানুষ।’
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহম্মেদ খান বলেন, ‘দুই একটা ভুল থাকতেই পারে। আমার খুব গরিব এক আত্মীয় শাহাদাত খানের নামের সঙ্গে যে আমার ফোন নম্বর গেছে সেটা আমি জানি না। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা হয়। কোনো মেম্বার তালিকা দিতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল-মামুন ভুইয়া বলেন, ‘মেম্বারদের মাধ্যমে নাম এনে সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তালিকা দেয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই-বাছাই করে। তবে তালিকায় আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনের নাম নেই।

Post Under