কসবায় আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ
দুই ঘন্টাব্যাপী দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছ অন্তত ২০ জন
এইচ.এম. সিরাজ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
টানা এক বছর পর, নিজ এলাকায় এসেই আইনমন্ত্রীকে প্রত্যক্ষ করতে হয় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ! ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই মেয়র প্রার্থীর একরকমের শক্তি প্রদর্শনে এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরসহ মোটরসাইকেলে করা হয় অগ্নিসংযোগ। টানা দুই ঘন্টাব্যাপী দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছ অন্তত ২০ জন। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
আরো পড়ুনঃ
শুক্রবার (৫ মার্চ) দুপুরে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এম.পি নিজ নির্বাচনী এলাকায় আগমন উপলক্ষে দুই গ্রুপের শোডাউনকে কেন্দ্র করে মন্ত্রীর উপস্থিতেই আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সূত্রপাত ঘটে। আর তা চলে টানা দুই ঘন্টা অবধি। এসময় ব্যাংক, গাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানোসহ অগ্নিসংযোগ করা হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে। বন্ধ হয়ে যায় উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে যান চলাচল। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ী, পথচারীসহ সকল মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা যায়, করোনার সংক্রমণজনিত কারণে গত এক বছর ধরেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসেন না আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এম. পি। টানা এক বছর পর ৫ মার্চ শুক্রবার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করতে আইনমন্ত্রী অ্যাডডভোকেট আনিসুল হক এম.পি কসবায় আসেন। বেলা সাড়ে ১১টায় পূর্ব নির্ধারিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রবেশেকালে প্রধান ফটকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ঘটে এই অপ্রীতিকর ঘটনা। মন্ত্রী তার উপস্থিতিতে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ দফায় কসবা পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বর্তমান মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এম.এ আজিজের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অন্ত:র্দ্বন্ধ চলে আসছিলো। শুক্রবার দুই গ্রুপের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। শুক্রবার আইনমন্ত্রী এলাকায় আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই মেয়র মনোয়ন প্রত্যাশী দুইজনের সমর্থকেরা শোডাউন করছিলো। মন্ত্রী আসার ঠিক আগ মুহূর্তে উভয় পক্ষের সমর্থকদের স্লোগান স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এক পক্ষের মোটরসাইকেল বহর অপর পক্ষের সমর্থকদের মিছিলে ঢুকে পড়লে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে সংঘর্ষ পৌর এলাকার আড়াইবাড়ি, মোসলেমগঞ্জ বাজার ও কসবা পুরাতন বাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মেয়র এমরান উদ্দিনের সমর্থকরা চারটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করাসহ ১০টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে। অপরদিকে মেয়র মনোয়ন প্রার্থী যুবলীগ সভাপতি এম.এ আজিজের সমর্থকেরা পুরাতন বাজার সীমান্ত কমপ্লেক্স এলাকায় ওয়ালটন শোরুম, ব্যাংক এশিয়া ও ডাচ বংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। থানা পুলিশ এবং জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘন্টাকাল চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পরবর্তী সংঘাত এড়াতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
কসবা থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর ভূইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে।বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।