বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুর্নবাসন প্রকল্পে বাংলাদেশ!

তানভীর মাহতাব আবীর:

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কক্সবাজার উপকূলে ঘণ্টায় ২৪০ কিমি গতিবেগে বাতাস আর প্রায় ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে সেদিন উপকূলে আছড়ে পড়ে হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়। লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই ঝড়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে কোটি মানুষ। ভিটেমাটি হারিয়ে কক্সবাজারে হাজার হাজার মানুষ সে সময় আশ্রয় নেয় কক্সবাজার বিমানবন্দর লাগোয়া সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায়। সরকারের এক প্রকল্পের বাস্তবায়নের পথ ধরে দীর্ঘ ৩০ বছর সেখানে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করা এসব মানুষের কষ্টের ইতি ঘটছে এবার।

কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন মানুষদের জন্য তৈরি করা এই প্রকল্পের পুরো এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে।

প্রথম ধাপের কাজ শেষে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে এসব ভবনে বসবাসের সুযোগ পাবে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার। প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হাসান বলছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন প্রকল্প বিরল। “জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি।”

এমন উদ্যোগ অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বহু পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওইসব এলাকায় গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একইভাবে ২০১০ সালে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে। এই প্রকল্পগুলোয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়েছে পাকা ও আধা পাকা দালানের ব্যারাক আকারে। তবে কক্সবাজারে ২০১৭ সালে কাজ শুরু হওয়া বহুতল ভবনের মাধ্যমে এমন প্রকল্পের বাস্তবায়ন এটাই প্রথম।

এই প্রকল্পটির নির্মানকাজের দায়িত্বে ছিল সরকারের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। প্রথম পর্যায়ের ২০টি ভবনের মধ্যে ১৯টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।

১০০১ টাকার নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন পরিবারগুলো এসব ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ বলছেন “ এই জায়গাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য মাটিকে অনেক উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিচের তলায় কোনো ফ্ল্যাট রাখা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকারও আশঙ্কা নেই।”

আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন এই প্রকল্প এলাকায় ফায়ার স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি, স্কুল প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে। থাকবে ১৪টি খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির,দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন।

২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষে প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটন জোন।

শুধুই কি থাকার ব্যবস্হা? প্রকল্প পরিচালক বলছেন, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে।

Post Under