বড় বেলার ঈদ

তানভীর মাহতাব আবীর

মহামারীর দুঃসময়টার মাঝে আরও একটি ঈদ। সবকিছু থেমে থাকার মাঝেও সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি আর ত্যাগের মহিমায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এবার পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করছেন।

আগে এক একটা ঈদ আসতো বহু প্রতিক্ষার প্রহর নিয়ে। বড়বেলায় এসে ঈদের নিয়ম বাঁধা একঘেয়েমিতায় ঠিক ঈদের মত আনন্দটা কেনও জানি এখন আর পাওয়া যায় না। হয়ত বাস্তবতা বুঝতে শিখে যাওয়া কিংবা দায়িত্বের চোখ রাঙানীর কারণে ঈদের খুশি অনেকেরই চার দেয়ালে বন্দি। তবু আমরা ভালো থাকা কিংবা রাখার আয়োজনে কখনো জিতে গেলে অনুভূতিগুলো ছোটবেলায় ফিরে যায় যেন। প্রিয় মানুষদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়িতে ছুটে যায় কম বেশি অনেকেই। বছরের অন্যান্য সময় নানা কারণে সব আত্মীয়দের সাথে হয়ত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ না থাকলে পারস্পারিক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ঈদের এই সময়টায় সেই দূরত্ব দূর করে সব আত্মীয়ের খোঁজ নেয়া, ইগোটা অন্তত এই একদিনের জন্য দূরে সরিয়ে রাখাতেই আনন্দ আর মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে চান আপামর বাঙালি । আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের স্বয়ং আল্লাহ্ও ক্ষমা করেন না।

এখন ঈদ মানে চাঁদ রাত জাগা, নামাজ থেকে এসে ঘুমানো, ভার্চুয়াল উইশ আর টিভির বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ইদ নাটক। শহুরে যান্ত্রিকতায় মানুষগুলো খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে নিজেদের বন্ধুত্বটাও হয়ে যায় যান্ত্রিকতার সাথে। স্বার্থ আমাদের মন গভীরে পৌঁছে গিয়ে হারিয়ে দেয় নিষ্পাপ হাসি আর পাশে থাকার মানসিকতাদের। আমরা তবু সুযোগ খুঁজি, এই পথ হারিয়ে চিরায়ত স্বস্তি আর ভালোলাগার পথে পা বাড়ানোর। হয়ত বাস্তবতার কাছে আটকে যাই, বিষন্নতার চোখ রাঙানিটাও উপেক্ষা করা দায় হয়ে যায় তবু সীমাবদ্ধতার মাঝেই সকলের হাসিমুখটা দেখতে পাওয়া পরম সৌভাগ্যই কি নয়?

উৎসবের এই দিন সকলের ভালো যায় না, আমি আপনি আমরা সকলে মিলে খারাপের মাঝেই ভালো থাকা আর ভালো দিনের প্রার্থনায় দু’হাত তুলি। পৃথিবীর সকল অসুখ কেটে যাক, মুছে যাক মন থেকে মনে আমাদের যত বিরহের সাতকাহন।

ঈদের আগে-পরের রাতগুলোয় অনেকেই বাজি ফুটানো আর উচ্চস্বরে গান বাজানোকে উৎসব পালনের মাধ্যম মনে করেন। আমরা এই কাজগুলো করার আগে আশে পাশের পরিবেশ আর মানুষগুলোর কথা ভাবার চেষ্টা করবো। বাজির স্প্লিন্টারে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, শহরে খালি থাকা বাসা বাড়িতে বাজির আগুনে দুর্ঘটনার আশন্কা তো আছেই। আপনার আশেপাশের বাড়িতে যদি বয়স্ক বা অসুস্থ কেউ থেকে থাকেন, বাজি আর গানের বিকট শব্দ তাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। মসজিদের মাইকে পর্যন্ত বাজি ফুটাতে নিষেধ করা হয়। আমরা সকলে সচেতন থাকার চেষ্টা করবো এই ব্যাপারে।

অনুভূতিগুলো বাঁচিয়ে রাখার গল্পে ছড়িয়ে যাক ইদের আনন্দ। । ঈদ মোবারক।

 

Post Under