কুমিল্লা কাস্টমসের দেশসেরা সাফল্য অর্জনে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের সম্মাননা

এমদাদুল হক সোহাগ
দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় অনলাইন রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সারা দেশের মধ্যে পরপর ছয় বার দেশ সেরার সাফল্য অর্জন করায় ছয় জেলার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও গুরুত্বপূর্ন অবদানের জন্য অংশীজনদের নিয়ে মিলনমেলা এবং কুমিল্লা কাস্টমস এন্ড ভ্যাট পারফর্মেন্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে ১৩জন কর্মকর্তাকে।

মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার ইএফডিতে এনবিআর, মুজিব বর্ষের প্রতিশ্রুতি অর্থনীতিতে অগ্রগতি এই স্লোগানকে ধারণ করে বুধবার কুমিল্লা নগরীর ভার্চুয়াল ফান টাউন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অত্র কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো: আবদুল হাকিম।

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আব্দুল মোনেম লিমিটেড, নিপ্রো জে.এম.আই ফার্মা লিমিটেড, পিএইচপি ইন্ড্রিগেটেড স্টীল মিলস লি ও গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। পণ্য খাতে ফরিদ গ্রুপ ও শফিউল আলম স্টীল রি-রোলিং মিলস্ লিমিটে ও আরমান কেমিক্যাল এন্ড সোপ ইন্ডাস্টিজ। সেবা খাতের অবদানের জন্য মাতৃভান্ডার, ভার্চুয়াল ফান টাউন ও গোলাম সারওয়ারকে সম্মাননা দেয়া হয়।

অপরদিকে কমিশনারেটের বিদায়ী ১৩ জন কর্মকর্তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিদায়ী কর্মকর্তাগণ হলেন, যুগ্ম কমিশনার মুশফিকুর রহমান, রাজস্ব কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মোঃ আবদুস সাত্তার এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হচ্ছেন: মোজাফফর হোসেন, মোঃ আসদুজ্জামান খান, বিজুয়ান রশিদ রিপন, মোঃ জায়েদ-উল আলম, আবুল কালাম আজাদ, মোঃ জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নূর-ঈ-আলম, মুহাম্মদ আরিফুদ্দিন, ফরহাদ হোসনে ও মোঃ জিয়াউর রহমান।

কৃতি কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন রাজস্ব কর্মকর্তা আমিনুল হক, হারাধন চন্দ্র পাল, তপন দাশ, কাউছার মাহমুদ ও আহম্মদ ছালাউদ্দিন। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন মোঃ আতিকুল ইসলাম, ইকরামুল হক রনি, শামীম মোল্লা, প্রনব । এছাড়া কর্মচারীদের মধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে মোঃ তোফায়েল আহমেদ, নোমান, মামুন ও শহীদুল প্রমুখ।

তাছাড়া, ভ্যাট আদায়ে প্রযুক্তি উদ্বুদ্ধকরন, সচেতনতা সৃষ্টি সহ কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সংবাদ, ডকুমেন্টারি, প্রত্রিকায়, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশের মাধ্যমে বিশেষ অবদান রাখায় সাংবাদিকের মধ্যে শেয়ার বীজ এর সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, প্রতিসময়ের সম্পাদক সাদিক হোসেন মামুন, গ্রেটারকুমিল্লার সম্পাদক মোঃ এমদাদুল হক সোহাগ, শেয়ার বীজের সিনিয়র রিপোর্টার রহমত রহমান, বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার এস.এম রাশিদুল ইসলাম, প্রথম আলোর রিপোর্টার গাজীউল হক সোহাগ, চ্যানেল আইয়ের প্রোগ্রাম প্রডিউসার এম.এ হানিফকে কুমিল্লা কাস্টমস এন্ড ভ্যাট পারফর্মেন্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ভ্যাট আদায়কে আরো সহজ করা দরকার। তৃণমূল পর্যায় থেকে ভ্যাট আদায় করলে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়বে। তৃণমূল পর্যায়ে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ভ্যাট আদায় করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। মানুষের মন জয় করে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হবে। আমরা এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। আমরা নিজের পায়ে দাড়াতে শিখেছি। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আয় বাড়াতে হবে।”

ফেনী চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি হিসেবে আবুল কাশেম বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ফেনীতে ভ্যাট অফিসের লোকবল কম। লোকবল বাড়াতে পারলে রাজস্ব আহরণও বাড়বে। এরকম অনুষ্ঠান প্রতি জেলায় করা উচিত।

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ডিএমডি এ কে এম মুহিউদ্দীন মোনেম বলেন, “আব্দুল মোনেম লিমিটেড বাংলাদেশের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে এক পথপ্রদর্শক। আমাদের দ্বারা কুমিল্লা টানা ছয় বার প্রথম হওয়ায় আমরা গর্বিত। আমরা প্রতিবারই সেরা করদাতা হিসেবে পুরস্কৃত হই। কাস্টমসের যেমন দায়িত্ব আছে, আমাদেরও তেমনি দায়িত্ব আছে। ভ্যাট হার উন্নত হওয়া উচিত। প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স হওয়া উচিত আমাদের দেশে। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে, তা সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। ভ্যাট ব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বণ্টিত করে দেওয়া উচিত। ইকোয়াল ডিস্ট্রিবিউশন, ফেয়ার প্লে।

আবুল খায়ের টোব্যাকোর এমডি বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগে. জেনারেল (অব.) শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “১৯৫৩ সালে আবুল খায়ের কুটির শিল্পের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। আর আজ তা মহীরূহ ধারণ করেছে। গত তিন বছর ধরে চট্টগ্রামে সেরা করদাতার পুরস্কার লাভ করে।”

জেএমআই গ্রুপের মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এই সম্মাননা আমাদের জন্য বিশেষ গৌরবের এবং অনুপ্রেরণার। আমি মাত্র তিনটি প্রোডাক্ট আর ৫০ জন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করছি। এখন আমার ৭৫০ লোকবল। বর্তমানে ৩৬টি দেশে রপ্তানি করি। করোনাকালীন সময়ে ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ সিরিঞ্জ তৈরির অর্ডার দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত ১৫ বছরে শিশুদের টিকার জন্য সিরিঞ্জ আমরাই তৈরি করে আসছি।

সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) জনাব মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা কাস্টমস টিম। অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট এর এটি শীর্ষস্থান অর্জনের ‘ডাবল হ্যাট্রিক’। এটি আপ্লুত হওয়ার মতো একটি বিষয় বটে। এ টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতা এনে দেওয়ার অগ্রণী নায়ক আমাদের কমিশনার মহোদয়।

কুমিল্লা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার জনাব মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, কর ব্যবস্থায় বেসিক ম্যানেজমেন্ট স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের কমিশনার মহোদয় মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের মোবিলাইজ করে কাজকে বেগবান করেছেন। এছাড়া তিনি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করেছেন। কর্মকর্তা ও করদাতাদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে তিনি গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করেছেন। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে আমাদের অবস্থান ভালো, আমাদের অর্থনীতির অবস্থাও ভালো। কিন্তু আমাদেরকে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।

 

কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরে কুমিল্লা কমিশনারেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪১২০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৩টি সূচকের মধ্যে ৮টি সূচকেই আমরা প্রথম। ১৫৪% রাজস্ব প্রবৃদ্ধি, অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে টানা ছয়বার প্রথম স্থান এসবই আমাদের অর্জন। গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সর্বোপরি আমার অফিসারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত ভাষণের সাথে মিল রেখে আমিও বতে চাই, উই আর ফর দ্যা ট্যাক্সপেয়ার্স, বাই দা ট্যাক্সপেয়ার্স এন্ড অব ট্যাক্সপেয়ার্স। করদাতারাই সবচেয়ে সম্মানিত। করদাতাদের করের মাধ্যমেই বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতি। ভারতের চেয়েও মাথাপিছু আয় আমাদের বেশি। সাফল্য অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন। কুমিল্লার কর্মপ্রবণতা এনবিআরের সম্মানও উচ্চকিত করেছে। করোনাকালে কুমিল্লা টিমের জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। আগেও বলেছি দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কর্মকর্তাদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলে উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে। ‘আলোকিত কাস্টমস, আলোকিত দেশ’ ও ‘অতিক্রম নয় ব্যতিক্রম’ শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থবছরের প্রথম থেকে কাজ করছে কুমিল্লা টিম। আলোকিত কাস্টমসের মাধ্যমে গড়ে উঠবে আলোকিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে অহর্নিশ কাজ করছে বাংলাদেশ কাস্টমস। আর সে স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা এনবিআরের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে।

Post Under