এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
চারটি ঘর দেয়া হয়েছিলো বরাদ্দ। গৃহহীন চারটি পরিবার দেখেছিলো আশার আলো, দেখেছিলো নিরাপদ আশ্রয়ের স্বপ্ন। কেবল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অবহেলায় গৃহহীন পরিবারগুলোর ভাগ্যে জুটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর! এতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো যেমন হয়েছে বঞ্চিত, তেমনি সরকারের প্রকল্পটি বাস্তবায়ণেও হয়েছে ব্যাহত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই গাফলতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলই নাখোশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রায়ন-২ পকল্পের অধীন ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার জমিতে গৃহনির্মাণ’ বিশেষ বরাদ্দের অধীন উপ-খাতের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটটি সেমি পাকা ঘর নিমার্ণের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আর্থিক অনুমোদন ও বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দুইটি, কসবায় একটি, নবীনগরে একটি এবং আশুগঞ্জে চারটি। তিন উপজেলায় হলেও ব্যত্যয় ঘটে আশুগঞ্জে। এখানকার ইউএনও নাকি চিঠিই পাননি! সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চিঠি জেলার অপর তিন ইউএনও পেলেন, একজনের না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রশ্নাতীত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফলতির জন্যই এমনটি হতে পারে বলে মনে করছেন ঊর্ধ্বতন দপ্তর ।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রায়ন-২ পকল্পের অধীন ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার জমিতে গৃহনির্মাণ’ বিশেষ বরাদ্দের অধীন উপ-খাতের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটটি সেমি পাকা ঘর নিমার্ণের জন্য চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আর্থিক অনুমোদন এবং বরাদ্দ দেয়া হয় টাকা। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দুইটি, কসবা উপজেলায় একটি, নবীনগর উপজেলায় একটি এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় চারটি ঘর বরাদ্দ হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হিসাব ভবন থেকে চীফ এ্যাকাউন্টস এণ্ড ফিন্যান্স অফিসার কর্তৃক জেলার চার উপজেলায় গৃহনির্মাণ বাবদ মোট ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ঘর নিমার্ণের জন্য চিঠির মাধ্যেমে ৩০ জুনের মধ্যে গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট আশ্রায়ণ প্রকল্পকে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আর সেই অনুযায়ীই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর এবং কসবা উপজেলায় ঘর নিমার্ণ কাজ শুরু হলেও আশুগঞ্জ উপজেলায় ঘটেছে ব্যতিক্রম। সংশ্লিষ্ট উপ-খাতে আশুগঞ্জ উপজেলায় চারটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব অবহেলার কারণে গৃহহীনরা বরাদ্দকৃত ঘর উপহার পেয়েও তাদের ভাগ্যে জুটেনি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার। এতে করে একদিকে যেমন সরকারের বিশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে তেমনি বরাদ্দ পাওয়া গৃহহীন মানুষগুলো হলেন প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো তাদের নামে বরাদ্দের খবর পাওয়ার পরপরই একাধিকবার ইউএনও মো. নাজিমুল হায়দারের কার্যালয়ে ছুটে যান। কিন্তু সম্প্রতি তারা জানতে পারেন, ইউএনও’র অবহেলায় তাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চলে গেছে! উপজেলা অফিস থেকে বলা হতো, ‘এখন করোনা, এখন কিসের ঘর?এসব বলে তাদেরকে তাড়িয়ে দিতো বলে ভুক্তোভুগীরা অভিযোগ করেন। ঘর বরাদ্দ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য মো. সোলাইমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার পেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। কিন্তু ইউএনও’র অবহেলায় আমি আজ ঘর থেকে হলাম বঞ্চিত।’ বরাদ্দ পাওয়া অপর একজন বলেন, ‘আমি কয়েকবার ইউএনও অফিসে গিয়েছি। তিনি আমাকে বলেন, আপনাদের সাথে পরে যোগাযোগ করা হবে।’ অসুস্থ রেজ্জাকের স্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন তার জন্য আমরা ধন্যবান জানাই। কিন্তু যাদের অবহেলায় আমরা ঘর পেলাম না তাদের বিচার চাই।’ রতন মিয়া বলেন, ‘প্রকল্প অফিস আমাদেরকে ফোনও দেওয়া হয়েছিল। আমরা ইউএনও অফিসে যোযোগও করি কিন্তু করোনার কথা বলে আমাদের বিদায় করে দেন।’
আশ্রায়ন প্রকল্প-২ ঢাকা অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘরের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ (৩০শে জুন) এর নির্ধারিত সময়ে উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুই দফা ফোনেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের একই চিঠি চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর পর তিনজন পেয়েছেন, অথচ অন্য একজন কর্মকর্তা পায়নি এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রশ্নাতীত।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফলতির জন্যই এমনটি হতে পারে। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমুল হায়দারের দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যাহত হলো, গৃহহীনরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পাওয়া থেকে হলেন বঞ্চিত। জেলার অপর তিন উপজেলায় ঘর নিমার্ণের কাজ শুরু করা হলেও আশুগঞ্জে কেনো হচ্ছে না এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, ‘আমি ওই চিঠি পাইনি।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একই সময়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, অন্য সবাই চিঠি পেয়ে কাজও শুরু করেছেন, কিন্তু আশুগঞ্জ কেন পায়নি তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘অন্যান্য উপজেলায় চিঠি পেয়ে কাজ শুরু করেছে। তিনি চিঠি না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি দায়িত্ববান এ কর্মকর্তার অবহেলায় বরাদ্দের টাকা ফেরত চলে গিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী যে নীতি এবং আর্দশ নিয়ে কাজ করেছেন, সেই চিন্তা চেতনার পরিপন্থী। এসব কর্মকর্তাদের জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয়।’ তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দোলা খাঁন বলেন, ‘অতীব গুরুত্বপূর্ণ এরকম একটি চিঠি না পাবার বিষয়টিতে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ছিলো কি না সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ.বি.এম আজাদ এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে এবিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে